এবার ছাত্রদলের পালা

বিএনপির ভ্যানগার্ড খ্যাত ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পালা এবার। জাতীয়তাবাদী যুবদল এবং জাসাসের আংশিক কমিটির ঘোষণার পর খুব অল্প সময়ের মধ্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে বলে পূর্বপশ্চিমকে নিশ্চিত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য।

এদিকে, বাংলাদেশ ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের ১৪ অক্টোবর। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সবচে বড় কমিটি দিয়েও সাবেক রাষ্ট্রপতি ও দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে না পারার মতো ব্যর্থতা নিয়ে বিদায় নিতে হয়েছে রাজিব-আকরামুল কমিটিকে। এমনকি সাধারণ সম্পাদক কোনো মামলায় গ্রেপ্তারও হননি একবারের জন্য।

বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের জন্য দলের চেয়ারপারসনকে পরামর্শ দিয়েছেন। অধিকতর তরুণ এবং দলের জন্য নিবেদিতদের গুরুত্ব পদে রাখার জন্যও অন্যান্যদের প্রতি নির্দেশনা এসেছে লন্ডন থেকে। আগামীতে কারা ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসতে পারেন সে বিষয়ে একটি খসড়াও পাঠিয়েছেন তারেক রহমান।

দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য পূর্বপশ্চিমকে বলেন, আন্দোলন- সংগ্রামে চরমভাবে ব্যর্থ হওয়ায় ছাত্রদলের বিদায়ী কমিটির ওপর নাখোশ অনেকেই। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরাসরি তিরস্কার করে নতুন নেতা বাছাইয়ের কথা বলেছেন। ঢাকার বাইরে ছাত্রদলের কোন কার্যক্রম না থাকায় এবং গত দুই বছরে একবারের জন্যও সাধারণ সভা করতে না পারায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এদিকে, বিদায়ী কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া কমপক্ষে ১ ডজন নেতার বিষয়ে জোর আলোচনা চলছে। তাদের হাতেই উঠতে পারে ছাত্রদলের আগামী দিনের নেতৃত্ব।

আগামী কমিটিতে ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসতে পারেন এমন এক ডজন নেতার মধ্যে রয়েছেন বিদায়ী কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন। ১৯৯৪ সালে এসএসসি পাস করা এ ছাত্রনেতার বর্তমান বয়স ৩৮ ছাড়িয়েছে। বিয়ে নিয়ে লুকোচুরি করা এ ছাত্রনেতার বাড়ি নোয়াখালীতে। আঞ্চলিক প্রভাবশালী কয়েকজন নেতাদের কারণে বারবার পিছিয়ে পড়লে আগামী কমিটিতে সভাপতি পদে তাকে নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে দলের মধ্যে।

বিদায়ী কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আকরাম উল হাসান পরবর্তী কমিটিতে সভাপতি হতে জোর লবিং শুরু করেছেন। ১৯৯৫ সালে এস এস সি পাস করা এ ছাত্র নেতার বাড়ি নরসিংদীতে। আঞ্চলিকতার কারণে এগিয়ে থাকলেও বিদায়ী কমিটির ব্যর্থতায় দায়ের কারণে হাইকমান্ড নিজেদের মতো করে ভাবছে। কারণ তিনি আন্দোলন সংগ্রামের সময় আত্মগোপনে ছিলেন এবং ভাইভার কেন্দ্রিক রাজনীতিতে ব্যস্ত সময় পার করেন। এত আন্দোলন সংগ্রামে তিনি একবারও গ্রেপ্তার হননি। এনিয়েও দলের মধ্যে আকরাম উল হাসানকে নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। তার বিয়ে নিয়েও একটি গুঞ্জন রয়েছে।

সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আজমল হোসেন পাইলটের বাড়ি নেত্রকোনায় এ ছাত্রনেতা এসএসসি পাস করেছেন ১৯৯৫ সালে। ৩৭ পেরুনো এই ছাত্রনেতা ২ সন্তানের জনক। আন্দোলনের সময় পালিয়ে বেড়িয়েছেন। তবে বর্তমানে প্রেসক্লাব এবং পার্টি অফিসকেন্দ্রিক তৎপরতা বেড়েছে। তিনি আলোচনায় আছেন সভাপতি পদের জন্য।
Chatra-Dal-Leaders-696×228
অপর সহ-সভাপতি নাজমুল হাসানের বয়সও ৩৭। সাবেক কমিটির দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। আন্দোলন সংগ্রামে তেমন ভূমিকা না রাখলেও দাপ্তরিক কাজে দক্ষতার কারণে তার বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে দলের হাই কমান্ড থেকে।

বিদায়ী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন বেশ কয়েকজন। ১৯৯৬ সালে এসএসসি পাস করা আসাদুজ্জামান আসাদ পরবর্তী কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য বেশ কোমর বেধেই নেমেছেন। ঝিনাইদহ থেকে উঠে আসা এ ছাত্রনেতা সাবেক ছাত্রনেতা আবু সাঈদ গ্রুপের প্রতিনিধি হিসেবেই বেশ আলোচনায় আছেন।

বায়েজিদ আরেফিনের বাড়ি নরসিংদীতে। সাবেক ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের ঘনিষ্ঠ লোক। এ নেতার বর্তমান বয়স ৩৫। আন্দোলন সংগ্রামে বেশ জোরালো ভূমিকার কারণে দলের হাইকমান্ডের সুনজরে রয়েছেন।

মিয়া রাসেলের বাড়ি টাঙ্গাইলে। ৩৬ বছর বয়সী এ নেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর ঘনিষ্ঠজন বলে ভালো পদের জন্য বিবেচিত হতে পারেন। আন্দোলনে তেমন ভূমিকা না রাখলেও সাংগঠনিক কাজে বেশ জোরালো ভূমিকা রাখছেন।

বিদায়ী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছাত্রনেতা মেহেবুব মাসুম শান্ত এসএসসি পাস করেন ১৯৯৮ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি করার ছোটখাটো কিছু বিষয়ে অভিযোগ থাকলে পরবর্তীতে তা শুধরে নিয়ে ছাত্রদলের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করছেন। মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন।

আলোচনায় থাকা অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা আগামী কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। ৩৬ বছর বয়সী এ ছাত্রনেতার বাড়ি দিনাজপুরে। উত্তরবঙ্গের প্রার্থী হিসেবে বেশ আলোচিত তিনি। তবে তার বিরুদ্ধে দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে বলে অনেকে অভিযোগ করেন।

এছাড়া বর্তমান কমিটির সম্পাদকীয় পদে থাকা বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতার বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। নোয়াখালীর মিনহাজ ভূঁইয়া বিদায়ী কমিটিতে সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিবাহিত এ ছাত্রনেতার স্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। যথেষ্ট ভদ্র ও মার্জিত হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

ক্রীড়া সম্পাদক সৈয়দ মাহমুদকে নিয়েও আলোচনা চলছে। তার বাড়িও নোয়াখালীতে। রাজনীতিতে তেমন আলোচিত না থাকলেও আন্দোলনের সময় কারাবরণ করে আলোচনায় উঠে এসেছেন এ ছাত্র নেতা।

বিদায়ী কমিটির মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সরদার আমিরুল ইসলাম অবিবাহিত। ২০০২ সালে এসএসসি পাস করা এ ছাত্রনেতার বাড়ি সিরাজগঞ্জে। আমীরুল ইসলাম আমিরের কর্মী হিসেবে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা সরদার আমিরুল মাঠ পর্যায়ের রাজনীতিতে পিছিয়ে থাকলেও সরকার বিরোধী সর্বশেষ আন্দোলন সংগ্রামে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। এছাড়া তিনি দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকার কারণে হাইকমান্ডের সুনজরে রয়েছেন।

অপর ছাত্র নেতা কর্মসূচী প্রণয়ন ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক তরিকুল ইসলামের বাড়ি যশোরে। আন্দোলনের সময় বেশ সক্রিয় ভূমিকার কারণে আলোচনায় রয়েছে।

বিদায়ী কমিটির সহ প্রচার সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকনকেও গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হতে পারে। মাদারীপুরে এ নেতা অবিবাহিত হওয়ায় বেশ এগিেয়ে রয়েছেন।

এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সভাপতি মিজানুর রহমান রাজ এবং ঢাকা কলেজের সাবেক সভাপতি কাজী মাসুদও ছাত্রদলের আগামী কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারেন বলে আলোচনায় রয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর